Bangladesh Victory Day 16th December

মহান বিজয় দিবস।


১৯৭১ সালের এই দিনেই পৃথিবীর বুকে ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। যেই দেশটি ছিলো স্বৈরাশাষন,নিপীড়ন, আর বৈষম্যের বেড়াজালে মুচড়ানো একটি দেশ। দু'শ বছরের শোষক ব্রিটিশরা এদেশ থেকে গেলেও ১৯৪৭ সালে আবারো পাকিস্তান নামক শোষকের অন্তর্ভুক্ত একটি নির্যাতিত দেশ ছিলো এক টুকরো আজকের এই ‘বাংলাদেশ’।

সময়,
‘১৯৫২ সালের ২১ ই ফেব্রুয়ারী,১৯৬৯ গনঅভ্যুথান আন্দোলন,১৯৭০ সালের নির্বাচন।’
এই প্রতিটি আন্দোলন, প্রতিটি বিজয় , প্রতিটি ভাষা আন্দোলনের শহীদ সালাম,বরকতের রক্তের ফোটায় ফোটায় থাকা দেশ প্রেমের প্রতিফলন ই ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের মহান ১৬ ই ডিসেম্বর ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশ ‘বাংলাদেশ’।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন , ‘তোমাদের যা কিছু আছে তা নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করো,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম... ’- শেখ মুজিবুর রহমান। পুরো একটি দেশের কোটি বাঙ্গালী সেদিনের এক ডাকেই সারা দিয়ে, নিজেদের ভাইয়ের রক্তের বদলা নিতে, বোনের
ইজ্জতের বদলা নিতে এ দেশ কে স্বাধীন করতেই দেশের কোটি মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছিলো।

সেদিন ঝাপিয়ে পড়া সকলেই ছিলো সকল পেশার মানুষ। কৃষক,কামার,কুমার,ছাত্র-ছাত্রী,ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার সকলেই। সেদিনের এই শ্রেনী পেশার মানুষের নিজেদের অবস্থান না বুঝে,জীবনের মায়া ত্যাগ করে , পরিবার ছেড়ে আমাদের আজকের বাংলাদেশ এর জন্যে যুদ্ধ করে গেছেন। আজ আমরা স্বাধীন ‘বাংলাদেশ’।

পৃথিবীর বুকে ‘লাল-সবুজের’ একটা পতাকা হয়েছে আমাদের। 
‘আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি’ একটি জাতীয় সংগীত হয়েছে আমাদের। এই একটি পতাকা আর একটি জাতীয় সংগীত পেতে লাখো মানুষের রক্ত দিতে হয়েছে। লাখো রাজাকার-আলবদরের মুখোমুখি হতে হয়েছে। লাখো নারীর মূল্যবান ইজ্জত দিতে হয়েছে। তাই এই ১৬ই ডিসেম্বর আমৃত্যু আমাদের জন্যে গৌরবের। ১৬ই ডিসেম্বরের দিনে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় স্বরণ করি সকল শহীদদের এবং দোয়া করি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে।

‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।’
সেই ১৯৭১ সালের মত সকল মানুষ জাত-ধর্ম,শ্রেনী-পেশা ভুলে গিয়ে সৎ ভাবে এই দেশকে ভালোবাসলেই আমরা আবারো আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্যে রেখে যেতে পারবো আরো সুন্দর একটি ‘বাংলাদেশ’।

বিজয় দিবস শুধু বাংলাদেশ কে স্বাধীন করেনি, করেছে পাকিস্তানের মত শৈরাচারী দেশ থেকে মুক্ত। একটি দেশের স্বাধীনতা কে ২৪ বছর আটকে রেখে শাসন করছিলো পাকিস্থানের মত দেশ। দুটি দেশের মধ্যে ছিলো শুধুই ধর্মীয় মিল এছাড়া আর কোনো মিল ছিলোনা।

বাংলাদেশ থেকে কয়েকহাজার মাইল দূরে অবস্থিত একটি দেশ পাকিস্থান। না ছিলো ভাষার মিল না ছিলো সংস্কৃতি কিংবা আচার-আচরন। শুধুই ছিলো ধর্মীয় মিল। আর সেই ধর্মীয় মিল থেকেই বাংলাদেশ-পাকিস্থান মিলেই ১৯৪৭ সালে একটি দেশ গঠন করা হয়।

সময়ের সাথে সাথে দুদেশের মধ্যে চলতে থাকা সমস্যার খোরাক। সে সময়ের সরকার,আমলা,চাকরীজীবি, সব কিছুতেই ছিলো বৈষম্য আর নির্যাতন। ১৯৫২ সালের আগে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। সেই সময়ে পাকিস্থান শুরু করে উর্দুকে রাষ্ট ভাষা করার জন্যে। পূর্ব বাংলা(বাংলাদেশ) ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে বাঙ্গালিরা প্রথম কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহন করে । একত্রে সকল শ্রেনি পেশার মানুষের সংমিলনে এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙ্গালী তাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করে এবং শৈরাচারী পাকিস্থানের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনের বীজ বপন করে। তারই ধারাবিকতায় ১৯৬৯ এর গন অভ্যুথান এবং পরবর্তি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙ্গালী দের জয় বাংলাদেশের মানুষের রক্তে আন্দোলন এবং স্বাধীনতার আহবান করে। এভাবেই বর্তমান সময়ের এই বাংলাদেশ আজ স্বাধীন ভাবে পৃথিবীর বুকে একটি দেশ।

লাখো শহীদের রক্তে এবং লাখো মা,বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশ আজ শৈরাচারী পাকিস্থান থেকে মুক্ত। আজ আমরা নিজেরা নিজেদের মায়ের ভাষা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি। প্রানের এই স্বাধীনতা আনতে আমাদের হারাতে হয়েছে হাজারো বুদ্ধিজীবিদের হাজারো ছাত্র সাধারন জনতা। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়েই আমরা পেয়েছি আজকের বাংলাদেশ।

No comments

Powered by Blogger.